উত্তাল যমুনা, চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ, জুমার পর বিশাল সমাবেশ
আ’লীগ নিষিদ্ধে এনসিপির ডাকে যোগ দিয়েছে জামায়াত

রাজধানীর যমুনা ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বানে এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ একাধিক রাজনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক দল।
শুক্রবার (৯ মে) সকাল পর্যন্ত এ কর্মসূচি টানা চলেছে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, জুমার নামাজের পর বড় জমায়েত হবে, যেখানে ঘোষিত হতে পারে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা।
অবস্থান কর্মসূচি: কে কখন এলেন?
- বৃহস্পতিবার রাত ১০টা: এনসিপির আহ্বানে শুরু হয় অবস্থান।
- রাত ১টা: এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান। সঙ্গে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
- রাত ১: ৩০টা–৩টা: একে একে হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন।
- রাতভর: ইনকিলাব মঞ্চ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জুলাই ঐক্যের নেতাকর্মীরাও যোগ দেন।
- শুক্রবার সকাল ৮টা: জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে কয়েক শত কর্মী বিক্ষোভে যোগ দেন।
নেতাদের বক্তব্য: ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে’
এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিলো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। এখনও সেটা না হওয়ায় আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে।
জামায়াত নেতা ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ গণহত্যাকারী দল। এ দল নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত এ দেশের মানুষ শান্তি পাবে না। আজকের বিক্ষোভ কোনও দলের একক দাবি নয়, এটা সব দেশপ্রেমিকের দাবি।
জুমার পর বড় জমায়েতের ঘোষণা
শুক্রবার বাদ জুমা যমুনার পূর্ব পাশে সার্ক ফোয়ারার সামনে বড় জনসভা হবে। এনসিপির নেতারা জানান, ৫টি ট্রাক একত্র করে মঞ্চ বানানো হচ্ছে। জুমার নামাজের পর সেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতি হবে বলে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আজ তারা বুঝবে, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ চায় না। তারা চায় নিষিদ্ধ ঘোষণা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অবরোধ
- পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত সড়কে।
- গাড়ি চলাচল বন্ধ, পথচারীদেরও সীমিতভাবে চলাচলের অনুমতি।
- র্যাব, ডিবি ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে যমুনার চারপাশে।
জনতার মুড: ‘রাজপথে আছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফিরবো না’
রাতভর মাইকিং, স্লোগান, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও ইসলামি সংগীত চলেছে। একজন আন্দোলনকারী বলেন, আমরা দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে আজ একতাবদ্ধ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ মোড় ছাড়বো না।
পূর্বপটভূমি: কেন এই বিক্ষোভ?
আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যা, দুর্নীতি ও দমননীতির’ জন্য দায়ী করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় এনসিপি ও জামায়াতপন্থী দলগুলো দাবি করেছিলো, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে হবে। তবে ৯ মাসেও সে বিষয়ে কোনও উদ্যোগ না নেয়ায় তারা রাজপথে ফিরে এসেছে।
পরবর্তী কী?
- আজ জুমার পরের সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
- রাজধানীতে যান চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
- আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া এখনও জানানো হয়নি।
সবার দেশ/কেএম