মাঠে নেমে প্রভাব ফিরে পেতে ১৬ দলের সমাবেশ
আওয়ামী দোসরদের নতুন জোট গঠনের চেষ্টা
আওয়ামী লীগের দোসর দীর্ঘদিনের মিত্র দলসমূহ আবারও সংগঠিত হচ্ছে—এবার এক নতুন পতাকার নিচে। স্বৈরাচার আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) মোট ১৬টি রাজনৈতিক দল ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনে একমত হয়েছে।
এ দুই সুবিধাবাদী নেতা অতীতে শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন, অন্য সদস্য দলগুলোরও বেশিরভাগ একসময় আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ রাজনীতিতে যুক্ত ছিলো—যা এ নতুন জোটকে আরও আলোচনায় এনে দিয়েছে।
রোববার রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জোটের সম্ভাব্য কাঠামো, অবস্থান, ভবিষ্যৎ কর্মসূচি এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময়সূচি নিয়ে আলোচনা হয়। জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জাপা (আনিস) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
নতুন জোটটি আগামী ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
জোটের আদর্শ: বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ধর্মীয় সহাবস্থান
সভায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন—ঐক্যে শক্তি রয়েছে, তাই একসঙ্গে নির্বাচনমুখী হলে ভালো ফল পাওয়ার মতো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তার ভাষায়, এ নতুন রাজনৈতিক জোটের মূল দর্শন দাঁড় করানো হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র এবং সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে।
রাজনীতির দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আবারও একসাথে
১৯৯৬ সালে হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় ছিলেন এরশাদপন্থী রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরবর্তীতে জেপি গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে থেকে তিনি ২০১৪ সালের বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন, এবং ২০১৮ সালের রাতের ভোটবিশিষ্ট নির্বাচনে আবারও জোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদে আসন নেন। তবে প্রহসনের অভিযোগ ঘেরা ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েও তাকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে উঠে আসা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ রাজনীতিতে স্থায়ী হন। তিনি ২০০৮ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব পান। ২০২৪ সালে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতার পদেও আসীন ছিলেন।
কিন্তু জুলাইয়ের রাজনৈতিক অস্থিরতায় শেখ হাসিনার পতনের পর দলীয় নেতৃত্ব প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে জি এম কাদেরের বিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অংশ নিয়ে এগিয়ে যান আনিস।
‘ঐক্যের রাজনীতি বনাম বিভাজনের সরকার’—সভায় মঞ্জুর মন্তব্য
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিস, আর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মঞ্জুর বক্তব্য—অন্তর্বর্তী সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে, সেখানে তারা করতে চান ঐক্যের রাজনীতি।
কোন কোন দল আছে এ নতুন জোটে
সভায় উপস্থিত ছিলেন জনতা পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (মতিন) এর এন এম সিরাজুল ইসলাম, মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা মাওলানা আশরাফুল হক, ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান আখতার হোসেন, জাগপার একাংশের সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলুসহ আরও অনেকে।
রুহুল আমিন হাওলাদার জানান—১৬ রাজনৈতিক দল বড় আকারের জোটে এক হতে সম্মত হয়েছে, যা সামনে আরও বিস্তৃত হতে পারে।
সভায় বক্তব্য রাখেন জাপা (আনিস) এর জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।
সবার দেশ/কেএম




























