সেলিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ত্যাগী নেতাদের ক্ষোভে উত্তাল মেঘনা
মেঘনায় বিএনপির ঘরে আওয়ামী দোসরদের আশ্রয়!
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সেলিম ভূঁইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী তাজুল ইসলামকে ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি মানিকারচর ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি, একাধিক হত্যা মামলার আসামী ও প্রতারক জাকির হোসেনকেও প্রশ্রয় দিয়েছেন।

মেঘনায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি বাণিজ্য, রাস্তা ও ক্লাব উদ্বোধন করায় বিএনপির অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন’ ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগে বৃহস্পতিাবর (২২ মে) বিকেলে বড়কান্দা ইউনিয়নে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৭ বছর মেঘনায় অনুপস্থিত থেকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছেন সেলিম ভূঁইয়া। মেঘনার ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর মজিদ, যিনি খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি দখল অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, তাকে এবং তার পরিবারের অন্নান্য সদস্যদেরও বিএনপিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে সভা থেকে।
উল্লেখ্য, আলমগীর মজিদ বড়কান্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল মজিদের ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, মেঘনা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী তাজুল ইসলামকে ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে সেলিম ভূইয়া আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। তিনি মানিকারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, একাধিক হত্যা মামলার আসামী, প্রতারক ও সন্ত্রাসী জাকির হোসেনকেও প্রশ্রয় দিয়েছেন।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বড়কান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী নেতা লম্পট ফারুক হোসেন রিপনকে পাশে রেখে ষঢ়যন্ত্র করে মেঘনা বিএনপির ত্যাগী নেতাদের দল থেকে দূরে রেখেছেন। নারী কেলেংকারীর হোতা এ রিপন জুলাই আন্দোলনের সময় এক সভায় মেঘনার সকল যুবকের মোবাইল চেক করে বিএনপি সংশ্লিষ্টা পেলে শাস্তি দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনগুলোতে ফারুক হোসেন রিপন, তার কাজিন ফলব্যবসায়ী মো. মোমেন মজিদ, আরেক হাজিন আলমগীর মজিদ, তার মরহুম চাচা আবদুল মজিদ, নুর ইসলামসহ আরও অনেকে বিএনপির এজেন্টদের মারপিট করে কেন্দ্র থেকে বের করে নৌকায় সিল মেরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জিতিয়ে এনেছিলেন।
বিএনপির ঘরে খালেদা জিয়ার ঘর ভাঙার লোক!
বক্তারা বলেন, যে ব্যক্তি খালেদা জিয়ার বাড়ি দখলের ঘটনায় জড়িত ছিলো, তাকেই আজ বিএনপির ছায়াতলে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত বিভাগীয় নেতা! এটা কি বিএনপির আদর্শ?
বড়কান্দা ইউনিয়নের যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদ মোল্লা বলেন— সেলিম ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে মিটিং করেছেন, ক্লাব উদ্বোধন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডে বিএনপির প্রতি স্থানীয়দের আস্থা দুর্বল হচ্ছে।
ব্যক্তিগত স্বার্থে দলীয় অবমূল্যায়ন?
বড়কান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন— যারা বিগত ১৭ বছর ত্যাগ করেছে, মামলা-হামলা খেয়েছে, জেল খেটেছে, বাড়িঘর ছেড়ে বনে-বাদারে, ধানক্ষেতে ঘুমিয়েছেন—তাদের বাদ দিয়ে এখন টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার লোকদের কমিটিতে বসানো হচ্ছে।
বড়কান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি তারেক, মহিলা দলের সভাপতি সালেহা বেগম এবং সহ-সভাপতি রোশি বেগম-সহ আরও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় রাজনীতিতে বিভাজন ও আশঙ্কা
এ মানববন্ধন মেঘনা উপজেলার রাজনীতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে স্পষ্ট করেছে। স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ ধরণের প্রক্রিয়া চলতে থাকলে দলীয় ভিত্তি ভেঙে পড়বে এবং তৃণমূল থেকে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ দলীয় ভিতরে আস্থার সংকট ও নৈতিক প্রশ্ন তৈরি করেছে। মেঘনার মতো স্পর্শকাতর এলাকায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বিএনপির নেতার সম্পর্ক রাজনীতিতে নতুন জটিলতা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সবার দেশ/কেএম