বাংলাদেশের গৌরব ও আত্মপরিচয়ের ৫৫তম বছর
আজ মহান বিজয় দিবস
আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশি জাতির হাজার বছরের শৌর্য, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিনেই বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৫৫তম বিজয় দিবসে জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। লাখো শহিদের আত্মত্যাগ এবং মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। সে ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের দিনটিকেই জাতি বিজয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হবে। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে এবার ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং প্রদর্শনের মাধ্যমে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। একই স্থানে আয়োজন করা হবে বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো।
এর পাশাপাশি ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। এটিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে। এসব অনুষ্ঠান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কুচকাওয়াজে অংশ নেবে।
বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে। একই সময়ে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ফুটবল ম্যাচ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কাবাডি ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন। একই সঙ্গে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওগুলো মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
সারা দেশের সিনেমাহলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। অডিটোরিয়াম ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র দেখানো হবে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিনের জন্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দেশের সব বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকা সদরঘাট, পাগলা ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসি জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মহান বিজয় দিবসে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থতা এবং দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে-কেয়ার সেন্টার ও শিশু পরিবারে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
সবার দেশ/কেএম




























