শোকাচ্ছন্ন জাতি, রাষ্ট্রীয় শোক আজ— মানিক মিয়া এভিনিউতে জানাজা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্নিপুরুষ এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি এখন না ফেরার দেশে। আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় এ সেনানির অকাল প্রয়াণে আজ গোটা বাংলাদেশ স্তব্ধ। গতকাল সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনে শুয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরেছেন তিনি। হাদির প্রয়াণে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর)দেশজুড়ে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরে শোকার্ত মানুষের ঢল
শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে হাদির মরদেহ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই ভিড় করেছিলেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং হাজারো সাধারণ মানুষ। কফিন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহযোদ্ধা ও আত্মীয়স্বজনরা। বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহ নেয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।
আজ সংসদ ভবনে নামাজে জানাজা
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় (মানিক মিয়া এভিনিউ সংলগ্ন) শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের কোনও প্রকার ভারী বস্তু বা ব্যাগ বহন না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাদ জুমা দেশের প্রতিটি মসজিদে হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার শোক ও সংবাদপত্রের নিরাপত্তা
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি হাদিকে সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে অভিহিত করেছেন। এদিকে হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারাও যেকোনও ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা এড়াতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিভৃত পল্লী থেকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃত্বে
ঝালকাঠির এক সাধারণ মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র থেকে হাদি হয়ে উঠেছিলেন চব্বিশের বিপ্লবের অন্যতম প্রতীক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং টেলিভিশনের টকশোতে যুক্তিনির্ভর বক্তব্য তাকে তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত করেছিলো। গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস আগেই তিনি জানিয়েছিলেন যে, খুনিরা তাকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ভয়হীন হাদি বলেছিলেন, ইনসাফের লড়াই থেকে তিনি পিছপা হবেন না।
খুনিদের সন্ধানে গোয়েন্দা তৎপরতা
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে দিনে-দুপুরে হাদির মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তদন্তে উঠে এসেছে যে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ এবং তার সহযোগীরা এ হামলার মূল হোতা। তারা বর্তমানে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং নেপথ্যের কুশীলবদের শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
হাদি চলে গেছেন, কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এখন কোটি তরুণের অনুপ্রেরণা। আজ জানাজার মধ্য দিয়ে চিরবিদায় জানানো হবে এ সূর্যসন্তানকে।
সবার দেশ/কেএম




























