বেশ্যাদের অসভ্য আবেগ প্রকাশে সভ্যতার সর্বনাশ

শরৎচন্দ্র, হ্যাঁ আমি কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাই বলছি, তাকে আপনারা সবাই নিশ্চয়ই চেনেন। ৮০ দশকের প্রথমার্ধে আমরা যারা এসএসসি পাস করেছি, তারা সহ আমাদের সময়কার কমবেশি এবং আমাদের আগে পরে দুই চার পাঁচ বছরের অগ্রজ বা অনুজ’রা সবাই কমবেশি তাকে চিনি। বর্তমান জমানার ছেলে মেয়েদের কথা আলাদা, তাদের মধ্যে ক’জন চিনে তা তো আর বলতে পারবো না। 

আমরা আমাদের নবম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গদ্য ‘সমুদ্রে সাইক্লোন’ পড়েছি। তার লেখা সাহিত্য পড়তে গেলে আমরা সবাই তার লেখার মধ্যে একবার ঢুকলে ডুব মেরে যেতাম, কখন উঠবো বুঝতে পারতাম না, এমন কথার জাদু তার লেখনীতে। সেজন্যই তিনি কথা শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন আমাদের কাছে। 

তার লেখনীতে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাংলাদেশ এবং ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্রপট খুব ভালো ভাবেই উঠে এসেছিলো । যে কেউ তার রচিত উপন্যাস পড়লে তা টের পাবেন। একটি ছোট্ট উপন্যাসের কথা যেমন ‘দেবদাস’ যেটি নিয়ে অনেক চিত্রনাট্যও তৈরি হয়েছে আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারত এবং বাংলাদেশ, দুই দেশেই। 

আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য আসলে তাকে নিয়ে নয়। আরেকটি উদ্দেশ্য আছে, সেটি হলো এ কথা শিল্পীর মতো করেই আমাদের দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা এগুলো সাহিত্য আকারে সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে অনুভব করছি। 

আরও পড়ুন <<>> রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠন ও সম্ভাবনা 

আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। আমরা আগে একসাথে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ ছিলাম পূর্ব পাকিস্তান নামে। আমাদের এ অঞ্চলটি কিছু সংখ্যক অন্য ধর্মাবলম্বী লোক ব্যতীত বাকি সকলেই আমরা মুসলিম জনগোষ্ঠী ছিলাম এবং আছি এখনও। গুগল বলছে ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯১.০৪ জন মুসলিম বাস করে। এ জনসংখ্যার আবার অর্ধেকের কিছু বেশি মুসলিম নারী এ দেশে বসবাস করছেন। 

ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, নারী পুরুষের সমান অধিকারের নামে সমাজের কিছু নারী বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যস্ত আছেন । অতিসম্প্রতি গতকাল তারা একটা মিছিল করেছেন বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে, যেখানে অত্যন্ত আপত্তিকর কিছু কথা বাংলা ভাষায় লেখা ছিলো, যা আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নারীদের আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদার প্রতিনিধিত্ব তো করেই-ই না, বরং অন্নান্য ধর্মের অনুসারী নারীদের প্রতিনিধিত্বও করে না। টেলিভিশন ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে কম বেশি সকলেই আমরা অবহিত হয়েছি। একটি লেখা আমার নজর নজর কেড়েছে তা হচ্ছে এরকম- ‘আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নেব হিস্যা।
কি সাংঘাতিক !

প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন তো ৯১% ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত জনসংখ্যার দেশ, যার অর্ধেকের বেশি নারী, তাদের কি এরকম আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে?

আপনাদের উত্তর নিশ্চয়ই আমারই মতো হবে, না, না এবং না। তাহলে কেনো এ আন্দোলন, কাদের ইন্ধনে বা কাদের উস্কানিতে এরকম আন্দোলন? ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অন্তবর্তী সরকার মসনদে আছেন, তাদের নিরপেক্ষ আচরণের সুযোগ নিয়ে যে শ্রেণীটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে, তারাতো আসলেই দেশের শত্রু, দেশের জনগণের শত্রু। তাই কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো আমি তো এখানে লিখছি, আপনাদের কাছেও আবেদন রাখছি আপনাদের মধ্যে যারা যারা ইচ্ছুক আছেন তারাও লিখুন, জনগণকে সচেতন করুন, নিজের দায়িত্ব পালন করুন, যাতে এরকম জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এ অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বোধগম্যতায় আসে। যে, না এমনটি করা অবশ্যই ঠিক নয় বরং এ বিষয়টি সমাজের সকল শ্রেণীর, বিশেষ করে ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন নারী, আলেম, ওলামায়ে কেরামদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সুন্দর নারী সংস্কার কমিশনের গঠনের মাধ্যমে তারা পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন। 

যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল তা না করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেন, তাহলে জাতির কাছে তো বটেই, স্বয়ং স্রষ্টার কাছেও আপনারা দায়ী থাকবেন । মুসলিমদের বিশ্বাস বা ঈমান অনুসারে যে পরকালীন জীবন আছে, আপনাদের সে পরকালীন জীবন ১৬ আনাই মিছে হয়ে যাবে।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।