ড. ইউনূসের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে বিএনপিকে খালেদা জিয়ার নির্দেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিংবা সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো ধরনের বিরোধে না জড়াতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবদিক বিবেচনা করে ধাপে ধাপে এগোনোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

শনিবার, ঈদুল আজহার দিন রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে গেলে খালেদা জিয়া এ নির্দেশনা দেন। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যে কোনও দিন অনুষ্ঠিত হবে।

এ ঘোষণার পর শুক্রবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে নতুন রোডম্যাপ নিয়ে দলের করণীয় বিষয়ে নানা মত উঠে আসে। পরে দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি এপ্রিলের প্রস্তাবিত নির্বাচনের সময়সূচির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট অনুষ্ঠানের দাবি আবারও তুলে ধরে।

পরদিন শনিবার গুলশানের ফিরোজায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে নতুন রোডম্যাপ প্রসঙ্গটি আলোচনায় ওঠে। ওই সময় খালেদা জিয়া নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সরকারের ঘোষণায় সংশয় প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দলের নেতাদের সরাসরি বিরোধিতা বা সংঘাতে না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে এগোতে বলেন।

তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গেলে বিএনপির কোনো লাভ হবে না। বরং যুক্তির ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করাই সবচেয়ে কার্যকর পথ। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন, যদি ড. ইউনূস কোনো কারণে দায়িত্বে না থাকেন, তখন পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই আলোচনার মাধ্যমেই নির্বাচনের রোডম্যাপ এগিয়ে নেওয়ার কৌশল ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

পরে আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হালিম, আফরোজা খানম রিতা— খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এ নির্দেশনার পর সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির নতুন বৈঠক ডাকা হয়। জানা গেছে, সেখানে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও কৌশলগত দিকনির্দেশনার ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আলোচনাই হবে সমস্যার সমাধানের প্রধান পথ। এ অবস্থানের ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির এতদিনের কঠোর অবস্থান কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে।

সবার দেশ/কেএম