কোলকাতার বিশৃঙ্খলায় মেসির দায়ই বেশি: গাভাস্কার
লিওনেল মেসির ‘গোট ট্যুর অব ইন্ডিয়া’ শেষ হলেও কোলকাতা পর্বকে ঘিরে বিতর্ক যেন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে দর্শকদের ক্ষোভ, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনার পর এবার সরাসরি মেসিকেই দায়ী করলেন ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।
ভারতীয় ক্রীড়া সাময়িকী স্পোর্টস্টার-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী কলামে গাভাস্কার লিখেছেন, কোলকাতার ঘটনায় শুধু আয়োজকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো একপেশে হবে। বরং মেসি ও তার টিম চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
গাভাস্কারের মতে, চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ্যে না থাকলেও যদি স্টেডিয়ামে মেসির নির্ধারিত উপস্থিতির সময় এক ঘণ্টা হয়ে থাকে এবং তিনি সেখানে মাত্র ২০ থেকে ২২ মিনিট অবস্থান করে চলে যান, তাহলে উচ্চমূল্যের টিকিট কেটে মাঠে আসা দর্শকদের হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভের মূল দায় মেসি ও তার সহযোগীদের ওপরই বর্তায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত ১৩ ডিসেম্বর কোলকাতা দিয়ে শুরু হয় মেসির ভারত সফর। সূচি অনুযায়ী যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তার পূর্ণ স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করার কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তবে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে সাদা রঙের অডি গাড়ি থেকে নেমে স্টেডিয়ামে প্রবেশের পর তিনি ছিলেন মাত্র ২২ মিনিট। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি পল।
মেসির মাঠে প্রবেশের মুহূর্তে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বয়ে যায়। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনীতিবিদ, ভিআইপি, পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীদের ভিড়ে তিনি আড়াল হয়ে পড়েন। সাধারণ দর্শকেরা তাকে ঠিকভাবে দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে গ্যালারি থেকে চেয়ার ও বোতল ছোড়া এবং স্টেডিয়ামের সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্ত বারবার মাইকে দর্শকদের শান্ত থাকার ও ভিড় সরানোর অনুরোধ জানান। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই সৌরভ গাঙ্গুলীর আগমনের খবরে উত্তেজনা আরও বাড়ে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, বাইরে অপেক্ষমাণ বলিউড তারকা শাহরুখ খান স্টেডিয়ামে প্রবেশের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে হয়।
গাভাস্কার তার কলামে উল্লেখ করেন, ওই সময় মেসির নিরাপত্তা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও বড় ধরনের হুমকি ছিলো না। তিনি যদি মাঠ প্রদক্ষিণ, দর্শকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো বা অন্তত একটি প্রতীকী পেনাল্টি কিক নেয়ার মতো কোনও নির্দিষ্ট কর্মসূচিতে অংশ নিতেন, তাহলে দর্শকেরা স্বাভাবিকভাবেই সরে যেতো এবং বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
তিনি আরও বলেন, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে মেসির অনুষ্ঠানগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কারণ সেখানে প্রতিশ্রুত কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে পালন করা হয়েছিলো। সুতরাং কলকাতার ঘটনায় শুধু আয়োজকদের দায়ী না করে, উভয় পক্ষই নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেছে কি না—তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।
গাভাস্কারের এ মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। মেসির মতো বিশ্বতারকার সফর ঘিরে আয়োজনে স্বচ্ছতা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ—কোলকাতা কাণ্ড সে প্রশ্নই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
সবার দেশ/কেএম




























