শেষমেশ পুলিশের জালে গ্রেফতার
‘ডাকাত কনে’ অনুরাধার বিয়ের ফাঁদে ২৫ পুরুষ

বিয়ে, যা নারী-পুরুষের কাছে একটি পবিত্র বন্ধন — সেটিকেই ভয়ঙ্কর প্রতারণার অস্ত্র বানিয়েছেন এক নারী। ভারতের অনুরাধা পাসওয়ান নামের এক তরুণী একে একে ২৫ জন পুরুষকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছেন।
প্রত্যেককে বিয়ের নামে সর্বস্বান্ত করে গয়না, নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যেতেন তিনি। এখন তাকে সবাই চেনে ‘ডাকাত কনে’ নামে।
কীভাবে করতেন প্রতারণা?
এইনারী প্রতিবারই নতুন নাম, শহর ও পরিচয় নিয়ে নিজেকে অসহায় গরিব কনে হিসেবে পরিচিত করতেন। বলতেন, বেকার ভাইয়ের ভার নিয়ে জীবনযুদ্ধে আটকে আছেন। এরপর ঘটকের মাধ্যমে পাত্র ঠিক হতো। বিয়ের আগে আড়ালে থাকা চক্রের একজন দুই লাখ রুপি দাবি করত ঘটক ফি হিসেবে।
মন্দিরে বা বাড়িতে হিন্দু রীতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হতো। বিয়ের পর অনুরাধা খুব সহজ-সরল ঘরণির মতো ব্যবহার করতেন। শ্বশুরবাড়ির সবার আস্থা অর্জন করতেন। এরপর একদিন চুপিচুপে গয়না, টাকা-পয়সা, মোবাইল—সব নিয়ে পালিয়ে যেতেন।
বিষ্ণু শর্মার করুণ কাহিনি
রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুরের বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মা এমনই একজন প্রতারিত ব্যক্তি। ফেরি করে পণ্য বিক্রি করা বিষ্ণু ঋণ নিয়ে বিয়ে করেন অনুরাধাকে। বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন কথিত ঘটক পাপ্পু মীনা। তাকে দেন দুই লাখ রুপি।
বিয়ের দুই সপ্তাহের মাথায় অনুরাধা পালিয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ১.২৫ লাখ রুপির গয়না, ৩০ হাজার রুপি নগদ এবং ৩০ হাজার রুপির মোবাইল। বিষ্ণু জানান, সেদিন রাতে হয়তো তার খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিলো, কারণ অস্বাভাবিকভাবে গভীর ঘুমে ছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় বিষ্ণুর মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে পরিবার থানায় অভিযোগ করে।
পুলিশের পাল্টা চাল
পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর চতুর কৌশলে একজন কনস্টেবলকে বর সাজিয়ে বিয়ের নাটক করে। তিনি ঘটকের কাছে গিয়ে ‘পাত্র’ হন। চক্রের সদস্যরা আবার বিভিন্ন নারীর ছবি দেখান, যার মধ্যে ছিলো অনুরাধাও।
তদন্তে দেখা যায়, অনুরাধার দেয়া সব নথি ও বিয়ের চুক্তিপত্র ভুয়া ছিলো। পরিকল্পনামাফিক পুলিশ তাকে ভোপাল থেকে গ্রেফতার করে।
যে নারী একটি পবিত্র সামাজিক সম্পর্ককে বারবার অপরাধের অস্ত্রে পরিণত করেছেন, তিনি শেষমেশ নিজেই ফাঁদে পড়েছেন পুলিশের নাটকে। ২৫টি পরিবার ধ্বংস করে ‘ডাকাত কনে’ এখন পুলিশের হেফাজতে।
চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে তদন্ত চলছে।
সবার দেশ/কেএম