ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের শঙ্কা
বিশ্ববাজারে বাড়লো তেলের দাম

মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক তেলবাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে।
রয়টার্স জানায়, বুধবার সকালে লন্ডনভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬.১৭ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় ৭৯ সেন্ট বা ১.২ শতাংশ বেশি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম ৮২ সেন্ট বা ১.৩ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৬২.৮৫ ডলারে।
সংঘাত ছড়ালে বিপদে বিশ্বজ্বালানি সরবরাহ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল যদি সত্যিই ইরানের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে ইরান প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তেল রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ইরান যদি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক ও আমিরাতের মতো ওপেক সদস্য দেশগুলোর তেল সরবরাহও বিঘ্নিত হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপথে জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশই হরমুজ প্রণালী দিয়ে হয়ে থাকে।
ইরান: ওপেকের অন্যতম প্রধান রফতানিকারক
উল্লেখযোগ্য, ইরান ওপেকভুক্ত তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক, যারা প্রতিদিন গড়ে ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করে। এ পরিমাণ সরবরাহে কোনো বড় ধরণের বিঘ্ন ঘটলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও তীব্রভাবে বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রে মজুদ পরিস্থিতিও অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (EIA) তথ্যমতে, গত সপ্তাহে দেশটিতে অপরিশোধিত তেলের মজুদ কিছুটা বেড়েছে। তবে পেট্রল ও ডিজেলের মজুদ হ্রাস পেয়েছে, যা গ্রীষ্মকালীন ভোক্তা চাহিদার আগে বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
ওপেক প্লাস নীতির বাইরে কাজাখস্তান
এছাড়া ওপেক প্লাস জোটের উৎপাদন সীমিত রাখার নীতিমালা উপেক্ষা করে কাজাখস্তান তেল উৎপাদন ২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এতে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের চাপ তৈরি হচ্ছে, যা আবার অন্যদিকে মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পরমাণু আলোচনা: অচলাবস্থা বজায়
এ প্রেক্ষাপটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পারমাণবিক আলোচনাও বর্তমানে অচলাবস্থায় রয়েছে। তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, অপরদিকে ওয়াশিংটনও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ফলে কূটনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষণ: ভূরাজনীতির উত্তাপ, বাজারে অস্থিরতা
বিশ্বজুড়ে তেলবাজার অনেকটাই ভূরাজনৈতিক উত্তাপনির্ভর হয়ে পড়েছে। এমন সময়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে শুধু জ্বালানি নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেই বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল কেবল জ্বালানির বিষয় নয়—এটা এখন ভূরাজনৈতিক অস্ত্র। তাই যে কোনও সামরিক উত্তেজনা বা নিষেধাজ্ঞা প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের পণ্যবাজার, মুদ্রাবাজার ও শেয়ারবাজারেও প্রভাব পড়বে।
সবার দেশ/কেএম