চাঁদাবাজিকে ‘না’ বলি, দেশ গঠনে ঐকমত্য গড়ি

ছাত্র সমন্বয়ক রিয়াদসহ ৫ জন রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে সে বিষয়ে একটি পোস্টিং দিয়েছিলাম ফেসবুকে। ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন, যার সবগুলি আমার পক্ষে যায়নি। বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। বিপক্ষে মন্তব্যকারীদের মধ্যে অনেককেই আমি চিনি, যারা ছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক। তাদের কেউ কেউ সক্রিয় রাজনীতিতেও যুক্ত। 

পক্ষের মন্তব্যগুলো যে রকম আমাকে আনন্দ দিয়েছে, বিপক্ষের মন্তব্যগুলো তার বিপরীত, তাতে আমি কিছুটা নিরানন্দ বোধ করেছি এবং এটা করা অতি স্বাভাবিক, কেননা আমিও রক্তমাংসের গড়া একজন মানুষ। পরমত সহিষ্ণুতা মানুষের একটি বড় গুণ, আর সে কারণে আমিও চেষ্টা করেছি বিপক্ষের মন্তব্যগুলো সহ্য করতে। 

যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত অথবা তাদের সমর্থক, তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন আমার বন্ধু। বলাই বাহুল্য, এ যে আওয়ামী সমর্থকদের বন্ধু বলাতে আমার অন্য বন্ধুরা আবার আমাকে বলবে আওয়ামী লীগের লোকরা কি আবার তোমার বন্ধু হতে পারে? যারা এ ধরনের প্রশ্ন করেন, তাদের জন্য বলতে চাই, ভাই! আওয়ামী সমর্থন করলে সে করতে পারে এটি তার ব্যক্তির স্বাধীনতা, তাই বলে কি তিনি আমার বন্ধু হতে পারেন না? তবে হ্যাঁ, কেউ যদি বলে যে আওয়ামী লীগের সমর্থক ঐ লোকটি লুট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদি করে দেশ ও দেশের ক্ষতি করেছে, এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে বিদেশে বসে, তাহলে অবশ্যই এ ধরনের কর্ম সম্পাদনকারী আওয়ামী লোকেরা আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়, অথবা তারা আমার অপছন্দের লোক। 

যেসব ফেবু বন্ধুরা বিপক্ষে মত প্রদান করেছেন, তাদের জন্য আমার ভাষ্য, আপনারা তাহলে যেভাবে চাঁদাবাজ রিয়াদের বিরুদ্ধে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন, ঠিক সেভাবে এ চাঁদাবাজদের যারা তৈরি করে এবং আপনাদের দলের যারা এরূপ কাজ করছে, অতীতে করেছে, তাদের নাম ঠিকানাসহ ফেসবুকে প্রকাশ করুন, দেশের পক্ষে কাজ করুন। তা না হলে তো আপনারাও দেশের ক্ষতি করছেন বলে দেশের সাধারণ জনতা বলবে, তাই নয় কি?

রিয়াদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া প্রয়োজন কিন্তু পাশাপাশি ওই যে আওয়ামীলীগ নেত্রী তাকে ধরিয়ে দিলেন, তিনিও তো খারাপ কাজ করেছেন, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন । তাহলে তাকে কেনো ধরা হচ্ছে না, তার বিরুদ্ধে কেনো কথা হচ্ছে না, এটা কি ভাবার বিষয় নয়? 

আমি তো মনে করি যে কোনও মানুষ যে কোন দল বা মতের হোক না কেনো, সে যদি চাঁদাবাজি করে, সন্ত্রাস করে, দেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কার্যকলাপ করে, তাহলে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

আরও পড়ুন <<>> সংবাদ ব্ল্যাকআউট কার স্বার্থে?

দেশের জনগণকে কোন দল বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত না করে আসুন জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করি । দলীয় স্বার্থ অবশ্যই আমরা দেখবো, সেটা নিজ নিজ দলের সাথে যখন জাতীয় স্বার্থে মিলে যাবে তখন। জাতীয় স্বার্থের সাথে মিলেনা এমন কোন দলীয় স্বার্থ আমাদের সকলেরই অবশ্যই পরিহার করা উচিত। যখন কোন জাতীয় স্বার্থ চলে আসবে তখন সকলে নিজের পছন্দ অথবা দলীয় স্বার্থ ছেড়ে জাতীয় স্বার্থের পক্ষে মত দিবো, তখনই আমাদের দেশ হবে সত্যিকারের স্বাধীন বাংলাদেশ, তা নাহলে পাবো হানাহানির বাংলাদেশ। আর হানাহানিতে কখনো জাতীর কল্যাণ হবে না ‌ জাতির কল্যাণ না হলে দলের কল্যাণ হবে না, দলের কল্যাণ না হলে ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের জন্যেও কোন কল্যাণ হবে না, এটি ভুলে গেলে চলবে না।

পরিশেষে নতুন অথবা পুরাতন চাঁদাবাজ যেই হোক না কেন, তারা সকলে সর্বদা শুধু ঘৃণার পাত্রই না পরিত্যাজ্যও বটে। পূর্বে এরকম যারা করেছে, তাদের সহ নতুনভাবে যারা শুরু করেছে তাদেরও একই আইনে বিচারের সম্মুখীন করা হোক এবং আমার মতে জাতীয় সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করে চিরতরে শয়তানি বন্ধ করে জনতাকে শান্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

আসুন সবাই সমস্বরে আওয়াজ তুলি, যত কল্যাণকর কাজ আছে তা সবাই করি, জাতীয় স্বার্থে কল্যাণমূলক কাজ করে দেশকে দ্রুত গড়ে তুলি।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।