রাজপথে লাখো জনতার ঢল, গুলশানে পৌঁছাতে সময় লাগলো আড়াই ঘণ্টা
বাসায় পৌঁছালেন খালেদা জিয়া

দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
তার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মী ডা. জুবাইদা রহমান। ২০০৭ সালের পর রাজনৈতিক হয়রানি ও মামলার কারণে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি। প্রায় ১৭ বছর পর তার এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় প্রবল আবেগ ও প্রত্যাশার উচ্ছ্বাস।
আড়াই ঘণ্টার যাত্রা: রাজপথজুড়ে জনস্রোত
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১১টার কিছু পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রওনা দেয় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র উদ্দেশে। তবে স্বাভাবিকভাবে ২০ মিনিটের যাত্রা সেদিন পরিণত হয় আড়াই ঘণ্টার আবেগঘন এক মিছিলে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে হাজারো নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন নেত্রীকে স্বাগত জানাতে। কোথাও স্লোগানে মুখর জনতা, কোথাও চোখে জল নিয়ে অপেক্ষারত কর্মী—‘মা’কে একনজর দেখার জন্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই নির্দেশনা ছিলো সড়কে অবস্থান নয়, বরং ফুটপাতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই নেতাকর্মীরা সে নির্দেশনা মেনেই সারিবদ্ধভাবে রাস্তার পাশে অবস্থান নেন।
লন্ডন থেকে আবেগঘন বিদায়, ঢাকায় আবাহনীময় প্রত্যাবর্তন
সোমবার (৫ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বিদায়ের সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাকে বিদায় দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারেক। সেখানে আরও ছিলেন প্রবাসী নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজন।
লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথম ১৭ দিন কাটান লন্ডন ক্লিনিকে, পরে তারেক রহমানের বাসায় থাকেন তিনি। বাসা থেকেই অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চলে তার চিকিৎসা।
জুবাইদার প্রত্যাবর্তন: রাজনীতির নতুন ইঙ্গিত?
ডা. জুবাইদা রহমানের এ প্রত্যাবর্তন শুধু পারিবারিক নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দলের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে—তারেক-জুবাইদা জুটির রাজনৈতিক পুনরাবির্ভাব কি বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে নতুন রূপরেখা তৈরি করবে?
দলীয় সূত্র জানায়, দেশে ফিরে জুবাইদা রহমান থাকবেন ধানমন্ডির পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবনে’। ইতোমধ্যে বাড়িতে সংস্কার, নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
‘ফিরোজা’ প্রস্তুত, অপেক্ষা নেত্রীর
খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত রাখা হয় তার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’। সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নেতাকর্মীদের জন্য ছিলো স্বাগত আয়োজন, বাড়ির সামনে ছিলো নিরাপত্তার ঘেরাও।
দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, বেগম জিয়ার শরীর এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয়। তার বিশ্রামের প্রয়োজন। তবে তার আগমনেই নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে।
সবার দেশ/কেএম