হাসিনাকে ফেরত দিন, আইনের মুখোমুখি করুন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক এবং তাকে আইনের মুখোমুখি করা হোক। তিনি সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না, বাংলাদেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না।

শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি—এক দিনের নয়, টানা ১৫ বছর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করার জন্য, শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য এ লড়াই করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়েছিলেন, আমরাও সে চেতনায় লড়েছি।

তিনি বলেন, এ সময়ে আমাদের ইলিয়াস আলীসহ ১,৭০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, প্রায় ২,০০০ মানুষ খুন হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ফ্যাসিবাদী, দানবীয় রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিল। আমরা সে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছি।

বিএনপি নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা প্রথম থেকেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বলেছিলাম—তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই। যে অপশক্তিগুলো আজ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, নির্বাচন হলে তারা কোনো সুযোগই পেতো না।

ঐকমত্য কমিশনের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কমিশনের ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ বাদ দিয়ে নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে—এটা অন্যায়, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। তারপরও আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল প্রেস কনফারেন্স করেছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন বা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করিনি। কিন্তু অন্য একটি রাজনৈতিক জোট এখন রাস্তায় নেমে চাপ সৃষ্টি করছে, যেন তাদের কথাই বাস্তবায়িত হয়।

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন,

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে—এটা ঘোষণা হয়েছে। আমরা গণভোটেও রাজি হয়েছি। আমাদের প্রস্তাব ছিলো, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করা হোক। এতে ব্যয় কমবে, কারণ আলাদা গণভোটে প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই আমরা বলেছি, ব্যালটে দুটি প্রশ্ন থাকুক—একটি সংসদ নির্বাচন, অন্যটি গণভোট।

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু মানুষ এখন জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। পিআর দাবি নিয়ে যারা এসেছে, সেটা কোনো আলোচনাতেই ছিলো না। এখন তারা জোট বেঁধে সরকারকে হুমকি দিচ্ছে—‘আজই মানতে হবে, না হলে নির্বাচন হতে দেবো না।’ এটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির কৌশল।

প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, তিনি বলেছেন, যেকোনও সময় হামলা হতে পারে। কিন্তু বলেননি, কারা হামলা করবে বা কোথা থেকে আসবে। জাতিকে তা জানানো উচিত ছিলো। জাতি প্রস্তুত—আমরাও প্রস্তুত, যেকোনও ষড়যন্ত্র ও হামলা প্রতিহত করতে।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সবার দেশ/কেএম