ক্ষমতায় থেকে রক্ত আর লাশ উপহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ: জামায়াত আমির
আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এসে দেশকে ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এ দেশের মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিলো, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ‘যুব ম্যারাথন’ কর্মসূচির উদ্বোধনের আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম ছিলো, যার পরিণতি জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। মানুষের ধারণা ছিলো, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে ভিন্ন পথে হাঁটবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তারা তিন দফায় ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে রক্ত আর লাশের রাজনীতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনকাল তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫, ১৯৯৬ এবং ২০০৯—এই তিন সময়ে দেশের এমন কোনও জনপদ নেই, যেখানে মানুষ হত্যা হয়নি। এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেয়ার অভিযোগে নোয়াখালীতে এক মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছিলো। তারা বলেছিলো, অতীতে ভুল হয়েছে, জুলুম হয়েছে—সব কিছুর জন্য বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। একবার সুযোগ দিলে তারা পরিবর্তিত রাজনীতি উপহার দেবে। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর তারা আবারও পুরনো চেহারায় ফিরে আসে।
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী বাস্তবতা তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, ১৯৭১ সালে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ বুকভরা আশা আর চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। মানুষ চেয়েছিলো বৈষম্যহীন সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার। কিন্তু স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ থাকার পরও রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়। এ বাহিনীর হাতে মানুষ নির্যাতিত হয়েছে, নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে শত শত মানুষের লাশ মাঠে-ঘাটে পড়ে ছিলো, দাফনের ব্যবস্থাও ছিলো না। সোনার বাংলা গড়ার স্লোগান দিয়ে দেশকে কার্যত শ্মশানে পরিণত করা হয়েছিলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীতের বস্তাপচা রাজনীতিকে পায়ের নিচে ফেলে দিতে হবে। এখন দেশের জন্য নতুন রাজনীতির প্রয়োজন—যে রাজনীতি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকবে এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও রাজনৈতিক মামলাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য শুধু দলীয় বিজয় নয়, বরং ১৮ কোটি মানুষের বিজয় নিশ্চিত করা। এ বিজয়ের পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যুবকরাই তাদের প্রতিহত করবে।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী কোনো বিশেষ সুবিধা চায় না। তবে কমিশন যদি কারও প্রতি সামান্য পক্ষপাতও দেখায়, তা বরদাস্ত করা হবে না। সংবিধান ও শপথ অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সবার দেশ/কেএম




























