শেষবার কেঁদে বলেছিলেন ওসমান হাদি
‘ভাইয়া, আমার বাচ্চাটার দিকে খেয়াল রাইখেন’
চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং দেশে–বিদেশে লাখো মানুষের দোয়া—সব কিছুকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি। অস্ত্রোপচারের পর সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে শাহাদাত বরণ- করেন।
মৃত্যুর পর তার জীবনসংগ্রাম, বক্তব্য, সতর্কবার্তা এবং আত্মত্যাগ ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে অসংখ্য ভিডিও। এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় থাকা একটি ক্লিপ—যেখানে আবেগে ভেঙে পড়া কণ্ঠে ওসমান হাদি বলছিলেন,
ভাইয়া, আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায়, আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন।
ভিডিওটি এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের অংশ। সেখানে সন্তান জন্মের পর নিজের দায়িত্ব, ভবিষ্যতের শঙ্কা ও সংগ্রামের পথ নিয়ে অত্যন্ত আবেগী স্বীকারোক্তি দেন হাদি। বলেন, তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছেন আল্লাহর হাতে—দেশ, সংগ্রাম ও আন্দোলনের পাশে থাকতে গিয়ে তার ব্যক্তিজীবন ও সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে যে আতঙ্ক তা লুকাননি।
ওসমান হাদি ওই সাক্ষাৎকারে সততা, সাহস ও জনঅধিকার পুনরুদ্ধারের শপথ স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন—
তিনি ফেরার পথ দেখে আসেননি।
গত ১২ ডিসেম্বর, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, পরে জরুরি ভিত্তিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।
চিকিৎসক ডা. আহাদ জানিয়েছেন—
ওসমান হাদি অস্ত্রোপচারের পরই শাহাদাত বরণ করেন।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে—নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি এখন পলাতক এবং ভারতেই অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন—রাজপথে তার উপস্থিতি, আন্দোলনের ভাষা এবং ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী বক্তব্য তাকে সাম্প্রতিক রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত মুখে পরিণত করেছিলো।
শেষ পর্যন্ত সে মানুষটির নিজের ভাষায়—‘বাচ্চাটার দিকে খেয়াল রাইখেন’—এ আর্তি এখন জনতার স্মৃতিতে এক অনির্বচনীয় শোক ও ক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সবার দেশ/কেএম




























