শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন
ব্যাংককে নেয়া হচ্ছে হাদিকে, প্রস্তুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নয়, আগামীকাল সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নেয়া হচ্ছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে হাদির ভাই ওমর বিন হাদি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সরকার এ বিষয়ে হাদির পরিবারকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার সকালেই হাদিকে ব্যাংককে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে এবং এর জন্য প্রায় ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগে সরকার ঘোষণা দেয়, হাদির চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের অনুমোদন ও মেডিকেল মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করছে।
এর আগে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সিঙ্গাপুরে নেয়া হচ্ছে। রোববার সকালে হাদির পরিবার ও একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গিয়েছিলো। জানা যায়, সরকার হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার জন্য রোববার সকালেই প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিলো। তবে পরবর্তীতে পরিবারের ইচ্ছা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে ব্যাংককে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হতে পারে বলেও জানা গিয়েছিল এবং বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সেখানে নেয়ার প্রস্তুতি ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গন্তব্য পরিবর্তন করে থাইল্যান্ডের একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
হাদির গুরুতর অসুস্থতার প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে হাদির পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়।
এর আগে রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিউরোসার্জারি বিভাগের অস্ত্রোপচার দলের সদস্য ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে জানান, শরিফ ওসমান হাদি এখনও আশঙ্কামুক্ত নন এবং তাকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিলো।
গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাদির প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। অপারেশন-পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। রোববার চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে মেডিকেল বোর্ড পুনরায় তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন।
মেডিকেল বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকালে করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, হাদির মস্তিষ্কের ফোলা বা সেরিব্রাল ইডিমা আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল অবস্থা নির্দেশ করে।
তবে রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি লক্ষ্য করা যায়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে।
হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে গুরুতর ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরে কিছু হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় প্রস্রাবের পরিমাণে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করা হচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতাও বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মেডিকেল বোর্ড জানায়, ব্রেন স্টেমে আঘাত এবং অতিরিক্ত মস্তিষ্কে ফোলাজনিত চাপের কারণে হাদির রক্তচাপে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। রোববার তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিলো। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি রোগীর ব্লাড সুগার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের জটিল ও সংকটাপন্ন অবস্থায় ব্লাড সুগারের ওঠানামা একটি পরিচিত ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ, যা সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।
সবার দেশ/কেএম




























