রাজধানী কাঁপাতে ১ লাখ বেলুন উড়িয়ে বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা
আ.লীগের ‘গ্যাস বেলুন ষড়যন্ত্র’ ভেস্তে দিলো ডিবি
রাজধানীতে আবারও কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এক অভিনব ‘নাশকতার ষড়যন্ত্র’ ভেস্তে দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে জানা গেছে, তারা একযোগে ১ লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে রাজধানীতে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেছিলো। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ডিবির বিভিন্ন বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর নয়টি বিভাগে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ডিবি মিরপুর বিভাগে ৩ জন, রমনা বিভাগে ৩ জন, সাইবার বিভাগে ২ জন, মতিঝিল বিভাগে ৪ জন, ওয়ারী বিভাগে ৫ জন, উত্তরা বিভাগে ২ জন, তেজগাঁও বিভাগে ২ জন, লালবাগ বিভাগে ৩ জন এবং গুলশান বিভাগে ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
‘বেলুনে স্লোগান, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা’
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পারেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলীয় স্লোগান লেখা এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলো। এসব বেলুনে দাহ্য গ্যাস ভরে তা উড়িয়ে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

এ পরিকল্পনার আওতায় তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, শাহবাগ, রমনা পার্ক, মতিঝিলের বাণিজ্যিক এলাকা, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংসদ ভবনের আশপাশের অঞ্চলেও একইসঙ্গে বেলুন উড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কর্মসূচি ঠিক করেছিলো।
ডিসি তালেবুর রহমান বলেন,
তারা গোপনে সমন্বয় করছিলো, যাতে একযোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেলুন ছাড়লে পুলিশ বিভ্রান্ত হয় এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলত একটি প্রতীকী নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো।
গোয়েন্দা নজরদারিতে ধরা পড়ে ষড়যন্ত্র
ডিবির বিভিন্ন ইউনিট গত এক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায়, এনক্রিপটেড গ্রুপ ও রাজনৈতিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি চালিয়ে আসছিলো। তাতে বেলুনের এ পরিকল্পনার তথ্য মেলে। এরপর রাজধানীর নয়টি থানা এলাকায় একযোগে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বেলুন, গ্যাস সিলিন্ডার, হিলিয়াম ভরার পাম্প ও স্লোগান লেখা ব্যানার ও স্টিকার উদ্ধার করেছে ডিবি।
গ্রেফতারদের পরিচয়
গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন—
- নওপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি রূপচান বেপারী,
- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আবরার খান তাহমিদ ওরফে তাহমিদ আশরাফ (২২),
- নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রায়হান খান আজাদ (২৭),
- শের-ই-বাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এ বি এম নুরুল হক ওরফে ছোটন চৌধুরী (৬৯),
- শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (বাবলু),
- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য গিয়াস উদ্দিন খোকন (৭০),
- মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভূইয়া,
- ভাষানটেক যুবলীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম ওরফে আহমাদ আলী (৪০),
- মোহাম্মদপুর শ্রমিক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি জসিম ওরফে বিল্লাল,
- গেন্ডারিয়া মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব রহমান (৫৫),
- শ্যামপুর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০),
- কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম (৪০),
- আশুলিয়া ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহজালাল (৩৮),
- রায়েরবাগ যুবলীগের সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ওরফে পলাশ,
- শরীয়তপুর নড়িয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস সরদার (৪৫),
- পল্টন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন (৫২),
- পল্টন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ (৫৬),
- নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সামছুদ্দিন আহমেদ সেলিম (৬২),
- হবিগঞ্জের লাখাই কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক রায়হান উদ্দিন রেহান (৫১),
- আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সহ-সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স (৪৩),
- সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম পারভীন,
- ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসির সরকার ওরফে গলাকাটা নাছির (৫৪),
- নেত্রকোণা শ্রমিক লীগের সদস্য আলী হোসেন (৩১),
- কুমিল্লার ৬নং নিকলি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মানিক খন্দকার (৫২),
- বরগুনার তালতলী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান কামাল (৪২)।

‘গ্যাস বেলুন পরিকল্পনা’ তদন্তে বিশেষ টাস্কফোর্স
ডিএমপি সূত্র জানায়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তদন্ত দল খতিয়ে দেখছে, কে বা কারা এ পরিকল্পনার অর্থায়ন করেছে এবং বেলুন সংগ্রহের মূল উৎস কোথায় ছিলো। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় এ কর্মসূচির প্রচার কারা করেছিলো, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
ডিবি বলছে, এটি শুধুমাত্র প্রতীকী কর্মসূচি নয়, বরং একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা, যাতে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছিলো।
ডিএমপি কর্মকর্তাদের ভাষায়, রাজধানীতে ‘গ্যাস বেলুনের বিশৃঙ্খলা’ ছিলো আওয়ামী লীগের নতুন কৌশল—যেখানে রাস্তা বন্ধ, আতঙ্ক সৃষ্টি ও পুলিশের মনোযোগ বিভ্রান্ত করার পরিকল্পনা একসঙ্গে সাজানো হয়েছিলো।
ডিবি জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এমন অভিযান চলমান থাকবে এবং আটক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও জননিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সবার দেশ/কেএম




























