Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০১:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপ নাকি দলীয় বিরোধ

যে কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী মাসুদ

যে কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী মাসুদ
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানান। তার এ ঘোষণায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদ নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পারিবারিক চাপের কথা উল্লেখ করলেও মাঠপর্যায়ে এ সিদ্ধান্তের পেছনে আরও নানা কারণ নিয়ে আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। স্থানীয় ও দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণেই নয়, বরং আর্থিক জটিলতা ও দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধও তার সরে দাঁড়ানোর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, একজন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী হিসেবে মাসুদুজ্জামানের একাধিক ব্যাংক ঋণ রয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে এসব ঋণ হালনাগাদ না হলে প্রার্থিতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কাও ছিলো। কেউ কেউ মনে করছেন, ঋণসংক্রান্ত এ জটিলতা নিরসন করতে না পারার কারণেই আগেভাগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই এ আসনে বিএনপির অন্তত তিনজন প্রভাবশালী নেতা তার প্রার্থিতা মেনে নেননি। তারা হলেন—তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তাদের বিরোধিতার কারণে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। একপর্যায়ে এ তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী জোটবদ্ধ হয়ে ঘোষণা দেন, মাসুদুজ্জামান বাদে তাদের মধ্য থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তারা সবাই একযোগে তার পক্ষে কাজ করবেন।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশন তফশিল ঘোষণার পরও কেন্দ্র থেকে এ বিরোধ মেটাতে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে মাঠের পরিস্থিতি ক্রমেই মাসুদুজ্জামানের জন্য অনুকূল না হয়ে ওঠায় তিনি নিজেকে ভোটের মাঠে নিরাপদ মনে করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই তার পরিবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো। ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পর সে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। পরিবারের অনুরোধেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি জানাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হননি। সংবাদ সম্মেলনেই প্রথম বিষয়টি প্রকাশ করলেন। পরবর্তীতে দলকেও বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।

আবেগঘন কণ্ঠে মাসুদুজ্জামান বলেন, তার এ সিদ্ধান্তে অনেক নেতাকর্মী কষ্ট পাবেন, সেটি তিনি জানেন। তবু ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক কিছু কঠিন বাস্তবতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন তিনি মানুষের পাশে থাকবেন। নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তকে তিনি নিজেই ‘তীরে এসে ফিরে যাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। পরিবার চায় না তিনি এ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাঠে থাকুন। পাশাপাশি আরও কিছু নিরাপত্তাজনিত বিষয় রয়েছে, যেগুলো প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। সামগ্রিক পরিবেশকে তিনি নেতিবাচক বলেও মন্তব্য করেন।

তবে তার এ ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের একাংশ। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়াটা দায়িত্বশীল আচরণ নয়। দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে, অথচ তিনি ভোটের মাঠে না নেমে দলকে বিব্রত করেছেন। তার যদি ঋণসংক্রান্ত বা অন্য কোনও জটিলতা থেকে থাকে, তা আগেই দলকে জানানো উচিত ছিলো। এখন বিষয়টি দলীয়ভাবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের এভাবে ফেলে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। জিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদের মহানগর শাখার সদস্য সচিব নাঈম খন্দকার বলেন, কিছুক্ষণ আগেও মাসুদুজ্জামান পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে এসে হঠাৎ এমন ঘোষণা তাদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের মালিক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। যোগদানের অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। তবে নির্বাচনের মূল লড়াই শুরুর আগেই তার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

প্যারিসে নিরাপত্তাজনিত কারণে নববর্ষের কনসার্ট বাতিল
বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি, মুকুট হারালেন মিস ফিনল্যান্ড
৩০ হাজার আওয়ামী কর্মীকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত: হাসনাত
অসলো ত্যাগ করলেন নোবেলজয়ী মাচাদো
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেফতারের নির্দেশ
চট্টগ্রামের ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর জামিন স্থগিত
প্রেসিডেন্ট হলে মেসিকে বার্সাতে ফেরাবেন মার্ক সিরিয়া
হাদির মৃত্যুর খবর ভিত্তিহীন: ইনকিলাব মঞ্চ
অত্যন্ত সংকটাপন্ন হাদি, দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বাংলাদেশকে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া ‘হুমকি’
মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকারী গৃহকর্মী আয়েশার স্বীকারোক্তি
বইমেলা ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ
নির্বাচন নিয়ে ভারতের নসিহত অগ্রহণযোগ্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করা ১৪ আন্দোলনকারী বরখাস্ত
ঢাকার ভারতীয় ভিসা সেন্টার বন্ধ ঘোষণা
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে উগ্রবাদী হুমকির অভিযোগ
হাদিকে গুলির আগে ফয়সাল তার বান্ধবীকে দেন দেশ কাঁপানোর বার্তা