বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধস: প্রাণহানি ৯৩৩
প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার দেশ—ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। মালাক্কা প্রণালিতে সৃষ্ট বিরল ঝড়ের প্রভাবে টানা সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৯৩৩ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বহু মানুষ, হাজার হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণকেন্দ্রে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, পুরো অঞ্চলজুড়ে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসংযোগ, ভেঙে পড়া সেতু ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা: মৃত ৩৩৪, নিখোঁজ দুই শতাধিক, জরুরি অবস্থা ঘোষণা
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’ আঘাত হানার পর শ্রীলঙ্কায় শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস। সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩৪। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করায় সেনা ও উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার ও পুনর্বাসন কাজে নিয়োজিত রয়েছে, তবে অসংখ্য গ্রাম এখনও বিচ্ছিন্ন।
ইন্দোনেশিয়া: সর্বোচ্চ প্রাণহানি, মৃত ৪৩৫
দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইন্দোনেশিয়া। বন্যা ও ভূমিধসে গত রোববার পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৪৩৫ জনের বেশি মানুষের। অনেকে এখনও নিখোঁজ, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নানা এলাকায় আটকা পড়ে আছে শত শত মানুষ, ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চলছে ধীরগতিতে। পাহাড়ি অঞ্চলগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানা গেছে।
থাইল্যান্ড: দক্ষিণাঞ্চলে মৃত্যু বেড়ে ১৬২
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সাত প্রদেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬২ জনে। মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। পানি কমলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকা থাকার আশঙ্কায় চলছে উদ্ধার অভিযান।
মালয়েশিয়া: মৃত্যু কম, ক্ষয়ক্ষতি সর্বোচ্চ
মালয়েশিয়ায় প্রাণহানি তুলনামূলক কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। উত্তরাঞ্চল পেরলিস রাজ্যের বহু এলাকা পানির নিচে ডুবে আছে। নিহত দুইজন, আর ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। খাদ্য–পানি সংকট বাড়ছে বলেও জানা গেছে।
উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আবহাওয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের কারণে এ অঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। চার দেশেই সম্মিলিতভাবে পুনর্বাসন, ত্রাণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এশিয়ার এ দুর্যোগ শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়—অর্থনীতি, কৃষি ও অবকাঠামোর ওপর পড়তে যাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। বৃষ্টি থামলেও মানুষের কান্না থামছে না।
সবার দেশ/কেএম




























